ডায়বেটিস কী? ডায়বেটিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার জানুন সহজভাবে

ডায়বেটিস কী, এর সাধারণ ও বিশেষ লক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এবং কার্যকর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানুন এই আর্টিকেলে। সচেতন থাকুন, সুস্থ জীবন গড়ুন।

ডায়বেটিস কী?—এই প্রশ্নটি আমাদের সমাজে এখন প্রায়ই শোনা যায়। কারণ এটি শুধু একটি রোগ নয়, বরং নীরব এক সঙ্গী, যেটি অজান্তেই জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনেক মানুষই ডায়বেটিসের নাম শুনে ভীত হয়ে পড়েন, আবার অনেকে এটিকে হালকাভাবে নেন। অথচ সত্য হলো—ডায়বেটিস এমন একটি অবস্থা যা সঠিকভাবে বোঝা, যত্ন নেওয়া এবং সচেতনতা তৈরি করা ছাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়।

যখন প্রথম কারও শরীরে ডায়বেটিস ধরা পড়ে, তখন বেশিরভাগ মানুষ এক ধরণের অস্বস্তি, ভয় এবং হতাশার মধ্যে পড়ে যান। কেউ ভাবে “আমার জীবন তো এখন শেষ!”, আবার কেউ ভাবে “এটা তো কেবল চিনি কম খাওয়ার ব্যাপার।” কিন্তু বাস্তবে ডায়বেটিস শুধুমাত্র রক্তের শর্করা বেড়ে যাওয়ার নাম নয়; এটি হলো শরীরের ভেতরে চলমান এক জটিল প্রক্রিয়ার ফলাফল, যার সাথে জড়িয়ে আছে জীবনযাপনের ধরণ, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, এমনকি জিনগত প্রভাবও।

আরও একটি বিষয় খেয়াল করার মতো—ডায়বেটিসকে অনেক সময় “সাইলেন্ট কিলার” বলা হয়। কারণ এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেকেই গুরুত্ব দেন না। চোখ ঝাপসা হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি, তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া কিংবা ওজন হঠাৎ পরিবর্তন—এসবকে সাধারণ সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। অথচ এগুলোই হতে পারে ডায়বেটিসের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত।

এই কারণেই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা জরুরি। পাঠকের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ—ডায়বেটিসকে কেবল একটি “রোগ” ভেবে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। বরং এটিকে জানুন, বুঝুন, এবং প্রয়োজনে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনুন। কেননা জেনে রাখুন, ডায়বেটিসকে একেবারে নির্মূল করা না গেলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, আর সেই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই জীবনে ফিরে পাওয়া যায় স্বাভাবিক ছন্দ।

এই লেখায় আমরা ধাপে ধাপে জানব ডায়বেটিস আসলে কী, এর ধরনগুলো কেমন, কীভাবে এটি আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—কীভাবে আমরা সচেতনতার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। এখন চলুন শুরু করি প্রথম প্রশ্ন থেকে—ডায়বেটিস কী?

সূচিপত্র

ডায়বেটিস কী?

ডায়বেটিস হলো এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে শরীর ঠিকমতো ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করে না। ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত একধরনের হরমোন, যার কাজ হচ্ছে রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজকে (চিনি) ভেঙে শরীরের কোষে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করা। যখন এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং সেটিই ডায়বেটিস হিসেবে পরিচিত।

অনেকেই মনে করেন ডায়বেটিস মানেই শুধু চিনি না খাওয়া। কিন্তু বিষয়টি এর চেয়ে অনেক জটিল। ডায়বেটিস কেবল খাদ্যাভ্যাসের ফল নয়, বরং এটি জিনগত কারণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, স্থূলতা এবং জীবনযাপনের নানা অসঙ্গতির সম্মিলিত ফলাফল। অর্থাৎ, এটি একক কোনো কারণে হয় না।

ডায়বেটিসকে সাধারণত “সাইলেন্ট ডিজিজ” বা নীরব রোগ বলা হয়। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এর লক্ষণগুলো তেমন চোখে পড়ে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে প্রভাব ফেলতে থাকে। দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি কিডনি, চোখ, হৃদপিণ্ড, স্নায়ু এবং রক্তনালী পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই জন্যই বলা হয়, ডায়বেটিস শুধুমাত্র একটি রোগ নয়, বরং একটি জীবনব্যাপী অবস্থা, যার সাথে রোগীর প্রতিদিনের জীবনযাপন গভীরভাবে জড়িয়ে থাকে।

ডায়বেটিসের ইতিহাসও বেশ পুরোনো। প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসকরা একে “Diabetes Mellitus” নামে ডাকতেন। “Diabetes” শব্দের অর্থ হলো “প্রবাহিত হওয়া”, আর “Mellitus” অর্থ “মধুর মতো মিষ্টি”। আসলে ডায়বেটিস রোগীর প্রস্রাবে গ্লুকোজ বের হয়ে আসায় এই নামকরণ করা হয়েছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবশ্য এ রোগ সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, তবুও এখনও বিশ্বজুড়ে এর প্রকোপ ভয়াবহ হারে বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন ডায়বেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ রোগের ঝুঁকি আরও বেশি। কারণ এখানে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সাথে সাথে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি এবং মানসিক চাপ বেড়েই চলেছে।

ডায়বেটিসকে পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব না হলেও এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, পরিমিত ব্যায়াম, ওষুধ সেবন এবং মানসিক চাপ কমানো—এই কয়েকটি বিষয় মেনে চলতে পারলে একজন ডায়বেটিস রোগীও স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।

সুতরাং, ডায়বেটিসকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে অবহেলা করারও সুযোগ নেই। বরং এটিকে বোঝা, সচেতন থাকা এবং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্য দিয়েই জীবনের প্রতিটি দিনে সুস্থতার স্বাদ পাওয়া সম্ভব।

ডায়বেটিসের ধরন

ডায়বেটিস কোনো একক রূপের রোগ নয়; বরং এটি কয়েকটি ভিন্ন ধরনে বিভক্ত। প্রতিটি ধরনের কারণ, প্রভাব এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা হলেও একটি বিষয় সবার মধ্যে অভিন্ন—রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এ কারণে ডায়বেটিসকে বুঝতে হলে প্রথমেই এর ধরনগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি। সাধারণত ডায়বেটিসকে চারটি প্রধান ধরনের মধ্যে ভাগ করা হয়।

১. টাইপ–১ ডায়বেটিস

টাইপ–১ ডায়বেটিসকে সাধারণত “ইনসুলিন-নির্ভর ডায়বেটিস” বলা হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হয় না বা খুব সামান্য তৈরি হয়।

এই ধরণের ডায়বেটিস সাধারণত শিশু বা কিশোর বয়সে দেখা দেয়, তাই একে অনেক সময় “জুভেনাইল ডায়বেটিস”ও বলা হয়। তবে বড় বয়সেও এটি হতে পারে। যেহেতু ইনসুলিন শরীরে তৈরি হয় না, তাই টাইপ–১ ডায়বেটিস রোগীদের আজীবন ইনসুলিন ইনজেকশনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

২. টাইপ–২ ডায়বেটিস

এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং বিশ্বব্যাপী ডায়বেটিস রোগীদের প্রায় ৯০%–৯৫% টাইপ–২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত। এই ধরনের ডায়বেটিসে শরীর ইনসুলিন উৎপাদন করে, কিন্তু কোষগুলো সেই ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে “ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স” বলা হয়।

টাইপ–২ ডায়বেটিস সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা দিলেও বর্তমানে শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও দ্রুত বাড়ছে। স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মানসিক চাপ এবং বংশগত কারণ এই ধরনের ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে অনেক সময় ওষুধ বা ইনসুলিনও লাগতে পারে।

৩. গর্ভকালীন ডায়বেটিস (Gestational Diabetes)

গর্ভাবস্থায় কিছু মহিলার শরীরে হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে ইনসুলিন কার্যকারিতা কমে যায় এবং তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। একে বলা হয় গর্ভকালীন ডায়বেটিস। সাধারণত গর্ভাবস্থা শেষ হলে এই সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে যেসব মহিলার গর্ভকালীন ডায়বেটিস হয়েছিল, তাদের ভবিষ্যতে টাইপ–২ ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এই ধরনের ডায়বেটিস মা ও শিশুর উভয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে—শিশুর ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকি এবং পরবর্তীতে শিশুর ডায়বেটিস হওয়ার প্রবণতা তৈরি হওয়া—এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অন্যান্য বিরল ধরণের ডায়বেটিস

উপরের তিনটি ধরন ছাড়াও কিছু কম প্রচলিত বা বিরল ধরনের ডায়বেটিস রয়েছে। যেমন—

মনোজেনিক ডায়বেটিস (Monogenic Diabetes): এটি জিনগত মিউটেশনের কারণে হয়, এবং শিশুদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

সেকেন্ডারি ডায়বেটিস (Secondary Diabetes): কিছু ওষুধ (যেমন স্টেরয়েড), হরমোনজনিত অসামঞ্জস্য বা অগ্ন্যাশয়ের রোগের কারণে এ ধরণের ডায়বেটিস হতে পারে।

ডায়বেটিসের ধরনগুলো আলাদা হলেও তাদের মূল সমস্যাটি এক—শরীর ঠিকভাবে ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারছে না। কারও ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই তৈরি হচ্ছে না, আবার কারও ক্ষেত্রে তৈরি হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। তাই রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা ভিন্ন হয়। কেউ আজীবন ইনসুলিন নিতে বাধ্য হন, আবার কেউ জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক বছর ধরে সুস্থ থাকতে পারেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—রোগ নির্ণয়ের পর এটি কোন ধরনের ডায়বেটিস, তা সঠিকভাবে জানা। কারণ সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয় চিকিৎসা পদ্ধতি ও জীবনযাত্রার কৌশল।

ডায়বেটিসের সাধারণ লক্ষণ

 

ডায়বেটিসকে প্রায়ই “নীরব ঘাতক” বলা হয়। কারণ এর প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সাধারণ ও স্বাভাবিক মনে হয় যে বেশিরভাগ মানুষ সেগুলোকে গুরুত্বই দেন না। অথচ সময়মতো লক্ষণগুলো চিনে ফেলতে পারলে ডায়বেটিস সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, এমনকি অনেক জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। ডায়বেটিস শরীরে ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলে, সেটি মূলত বোঝা যায় এ রোগের লক্ষণগুলোর মাধ্যমে।

অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও প্রস্রাব

ডায়বেটিসের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো বারবার তৃষ্ণা পাওয়া এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে গেলে শরীর সেই গ্লুকোজ বের করে দিতে চায় প্রস্রাবের মাধ্যমে। ফলে কিডনি অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে, আর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। এর ফলে বারবার তৃষ্ণা লাগে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয়।

অস্বাভাবিক ক্লান্তি

অনেকেই ভাবেন, ক্লান্তি মানেই ঘুম কম হয়েছে বা কাজ বেশি হয়েছে। কিন্তু ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত বোধ করেন। কারণ গ্লুকোজ রক্তে থাকলেও তা ইনসুলিনের অভাবে শরীরের কোষে শক্তি হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না। অর্থাৎ, শরীরের প্রকৃত জ্বালানি ঠিকমতো পৌঁছাতে না পারায় সারাক্ষণ অবসন্ন লাগে।

হঠাৎ ওজন পরিবর্তন

ডায়বেটিসে ওজনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে। কারও ক্ষেত্রে দ্রুত ওজন বেড়ে যায়, আবার কারও ক্ষেত্রে হঠাৎ কমে যায়। ইনসুলিনের অভাবে শরীর যখন গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন শক্তির জন্য মাংসপেশি ও চর্বি ভাঙতে শুরু করে। এর ফলে হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে। আবার অন্যদিকে, অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা ও বেশি খাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে।

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

ডায়বেটিসের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হলো ক্ষত শুকাতে দীর্ঘ সময় লাগা। রক্তে শর্করা বেশি থাকলে রক্তনালীর ক্ষতি হয়, ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। একইসাথে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে সামান্য কাটা-ছেঁড়াও দ্রুত শুকাতে চায় না, বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

চোখ ঝাপসা দেখা

রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে শরীরের তরল ভারসাম্যে প্রভাব পড়ে। এতে চোখের লেন্স ফুলে যেতে পারে, ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চোখে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকিও তৈরি হয়।

চুলকানি ও ত্বকের সমস্যা

ডায়বেটিসে আক্রান্ত অনেকের ত্বকে চুলকানি, কালচে দাগ বা সংক্রমণ দেখা দেয়। বিশেষ করে গোপনাঙ্গের চারপাশে বা ত্বকের ভাঁজে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। রক্তে অতিরিক্ত চিনি থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের সুযোগ পায়।

অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ

বারবার ক্ষুধা লাগা

হাত-পায়ে অবশ বা ঝিঝি ধরা

মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া

রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া

এসব লক্ষণগুলো একা একা দেখলে তেমন গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু যদি একসাথে একাধিক লক্ষণ দেখা দেয় এবং তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তাহলে দ্রুত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয়। তাই অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা আসলে ডায়বেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু সচেতন থাকলেই এসব প্রাথমিক সংকেত চেনা সম্ভব। তাই যদি আপনি বা আপনার কাছের কারও মধ্যে বারবার তৃষ্ণা লাগা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ওজনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

টাইপ–১ ডায়বেটিসের লক্ষণ

টাইপ–১ ডায়বেটিস মূলত শিশু, কিশোর এবং তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, যদিও যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে। এ ধরণের ডায়বেটিসে শরীর একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, কারণ অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমে থাকে কিন্তু কোষ সেই শক্তি ব্যবহার করতে পারে না। এই অবস্থার কারণে টাইপ–১ ডায়বেটিসের কিছু বিশেষ লক্ষণ স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে।

অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও প্রস্রাব

টাইপ–১ ডায়বেটিসে আক্রান্ত শিশু বা কিশোররা সাধারণত সবসময় পানি খেতে চায়। বারবার তৃষ্ণা পাওয়া এবং অস্বাভাবিকভাবে বেশি প্রস্রাব হওয়া এখানে খুব সাধারণ লক্ষণ। শরীর অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করে দেওয়ার জন্য প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে বারবার টয়লেটে যেতে হয়।

দ্রুত ওজন কমে যাওয়া

অনেক সময় টাইপ–১ ডায়বেটিস ধরা পড়ার আগেই শিশু বা কিশোরের ওজন হঠাৎ কমতে শুরু করে। শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন না পাওয়ায় শক্তির জন্য মাংসপেশি ও চর্বি ভাঙতে শুরু করে। এর ফলে ওজন দ্রুত নেমে যায়, যদিও খাওয়ার পরিমাণ স্বাভাবিক কিংবা অনেক সময় বেড়েও যেতে পারে।

অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা

শরীর যখন খাবার থেকে গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন কোষে শক্তির ঘাটতি তৈরি হয়। এই কারণে টাইপ–১ ডায়বেটিসে আক্রান্তদের প্রায়ই ক্ষুধা বেড়ে যায়। খাওয়ার পরও তারা খুব দ্রুত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন।

অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা

টাইপ–১ ডায়বেটিসে শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি না পাওয়ায় রোগী সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করেন। শিশুদের ক্ষেত্রে পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যেতে পারে, খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সারাদিনের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।

ঝাপসা দেখা ও দৃষ্টিশক্তি সমস্যা

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে চোখের লেন্সে পানি জমে যেতে পারে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি স্থায়ী চোখের সমস্যায় পরিণত হতে পারে।

ঘন ঘন সংক্রমণ ও ক্ষত শুকাতে দেরি

টাইপ–১ ডায়বেটিস রোগীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে তারা ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণে দ্রুত আক্রান্ত হন। এছাড়া যেকোনো ক্ষত স্বাভাবিকের তুলনায় দেরিতে শুকায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

মেজাজ পরিবর্তন ও অস্থিরতা

শিশু বা কিশোরদের ক্ষেত্রে টাইপ–১ ডায়বেটিসের আরেকটি লক্ষণ হলো হঠাৎ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা অস্থিরতা। রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করায় মস্তিষ্কের কার্যক্রম প্রভাবিত হয় এবং আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়।

ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (Diabetic Ketoacidosis)

টাইপ–১ ডায়বেটিসে সবচেয়ে বিপজ্জনক লক্ষণগুলোর একটি হলো ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস। ইনসুলিন না থাকায় শরীর যখন চর্বি ভাঙতে শুরু করে, তখন কিটোন নামক ক্ষতিকর উপাদান তৈরি হয়। এর ফলে রোগীর শ্বাসে অস্বাভাবিক গন্ধ (ফলের মতো), বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এ অবস্থা জরুরি চিকিৎসা ছাড়া প্রাণঘাতী হতে পারে।

টাইপ–১ ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো সাধারণ ডায়বেটিসের মতো হলেও এরা অনেক বেশি তীব্র এবং দ্রুত দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু বা কিশোরের মধ্যে যদি হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি এবং ক্ষুধা বেড়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে ডায়বেটিস পরীক্ষা করা উচিত। কারণ যত দ্রুত এ রোগ ধরা পড়বে, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে এবং রোগীকে গুরুতর জটিলতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

টাইপ–২ ডায়বেটিসের লক্ষণ

টাইপ–২ ডায়বেটিস হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরণের ডায়বেটিস, যা বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০%–৯৫% রোগীর মধ্যে দেখা যায়। এই ধরনের ডায়বেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করে বটে, তবে শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। একে বলা হয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। ধীরে ধীরে শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনও কমে আসে এবং তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। টাইপ–২ ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে দেখা দেয়, এজন্য অনেক সময় রোগীরা বুঝতেই পারেন না যে তারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত।

অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও প্রস্রাব

টাইপ–২ ডায়বেটিসে শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমে থাকার কারণে কিডনিকে বাড়তি কাজ করতে হয়। এতে শরীর অতিরিক্ত তরল বের করে দেয় প্রস্রাবের মাধ্যমে। ফলে রোগীর বারবার প্রস্রাব হয় এবং স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি তৃষ্ণা লাগে।

ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা

টাইপ–২ ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন। কারণ গ্লুকোজ রক্তে থাকলেও তা কোষে প্রবেশ করতে পারে না, ফলে শরীর শক্তি ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে শরীরে একধরনের স্থায়ী দুর্বলতা তৈরি হয়।

ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া

রক্তে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ থাকলেও যখন কোষ তা ব্যবহার করতে পারে না, তখন শরীর শক্তির ঘাটতি অনুভব করে। এর কারণে রোগীর ক্ষুধা বেড়ে যায়। খাওয়ার পরও খুব দ্রুত ক্ষুধা পায় এবং খাওয়ার প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

ওজন পরিবর্তন

টাইপ–২ ডায়বেটিসে অনেক সময় ওজন বেড়ে যায়, আবার কখনও হঠাৎ ওজন কমে যায়। স্থূলতা এ ধরনের ডায়বেটিসের অন্যতম কারণ হলেও ইনসুলিন কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশি ক্ষয় হতে শুরু করলে ওজন কমতেও পারে।

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

টাইপ–২ ডায়বেটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া। উচ্চ রক্তশর্করা রক্ত সঞ্চালনে প্রভাব ফেলে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। ফলে ছোটখাটো কাটা বা ছেঁড়াও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময় নেয় শুকাতে।

চোখের সমস্যা

টাইপ–২ ডায়বেটিস রোগীরা প্রায়ই ঝাপসা দেখার সমস্যায় ভোগেন। রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে চোখের লেন্সে তরল জমে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রেটিনোপ্যাথি, গ্লুকোমা বা এমনকি অন্ধত্বের ঝুঁকি তৈরি হয়।

হাত-পায়ে অবশ বা ঝিঝি ধরা

রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে, যাকে বলা হয় নিউরোপ্যাথি। এর ফলে হাত-পায়ে অবশ লাগা, ঝিঝি ধরা বা ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে তীব্র হয়।

ঘন ঘন সংক্রমণ

টাইপ–২ ডায়বেটিসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ দ্রুত হয়। বিশেষ করে ত্বক, দাঁত ও মাড়ি, এবং প্রস্রাবের সংক্রমণ খুব সাধারণ লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়।

অন্যান্য লক্ষণ

রাতে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়া

ত্বকে কালচে দাগ (বিশেষত ঘাড় ও বগলের কাছে)

মেজাজ খিটখিটে হওয়া

মাথাব্যথা বা মনোযোগে ঘাটতি

টাইপ–২ ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো সাধারণত আস্তে আস্তে প্রকাশ পায়। এজন্য অনেক মানুষ বছর পর বছর ধরে এই রোগ নিয়ে বেঁচে থাকেন কিন্তু বুঝতে পারেন না। যখন লক্ষণগুলো তীব্র হয় তখন রোগ ইতোমধ্যে শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের (যেমন স্থূলতা, পরিবারে ডায়বেটিসের ইতিহাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব) নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। সময়মতো শনাক্ত করা গেলে টাইপ–২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়।

গর্ভকালীন ডায়বেটিসের লক্ষণ

গর্ভকালীন ডায়বেটিস (Gestational Diabetes) হলো এক বিশেষ ধরনের ডায়বেটিস যা শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় ঘটে। গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। যদিও শিশুর জন্মের পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভকালীন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে মা ও শিশুর জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এজন্য এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও প্রস্রাব

গর্ভকালীন ডায়বেটিসে আক্রান্ত মহিলারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তৃষ্ণা অনুভব করেন এবং ঘন ঘন প্রস্রাব করতে হয়। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই প্রস্রাবের চাপ বাড়ে, তাই অনেক সময় এটি সাধারণ পরিবর্তন মনে করা হয়। কিন্তু যদি অতিরিক্ত মাত্রায় ঘটে, তবে এটি ডায়বেটিসের সতর্ক সংকেত হতে পারে।

অস্বাভাবিক ক্লান্তি

গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে গর্ভকালীন ডায়বেটিসে শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলেও তা কোষে শক্তি হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না। এর ফলে শরীরে শক্তির ঘাটতি তৈরি হয় এবং রোগী অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল বোধ করেন।

ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া

শরীরে শক্তির ঘাটতির কারণে বারবার ক্ষুধা লাগতে পারে। অনেক সময় পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার পরও মহিলারা খুব দ্রুত ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন। এটি ডায়বেটিসের একটি সাধারণ লক্ষণ।

ঝাপসা দেখা

গর্ভকালীন ডায়বেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে চোখের লেন্স ফুলে যেতে পারে। এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় হরমোনজনিত কারণে চোখের স্বাভাবিক পরিবর্তনও হয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী ঝাপসা দেখা দিলে তা অবহেলা করা উচিত নয়।

ঘন ঘন সংক্রমণ

ডায়বেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে প্রস্রাবনালী সংক্রমণ (UTI), ত্বক ও গোপনাঙ্গে ছত্রাক সংক্রমণ বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় এ ধরনের সংক্রমণ মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

শিশুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি

গর্ভকালীন ডায়বেটিসে শিশুর শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমা হতে পারে। এর ফলে শিশুর ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় (৪ কেজির বেশি)। এতে সিজারিয়ান ডেলিভারির ঝুঁকি বাড়ে এবং নবজাতকের জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্ট, হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা হঠাৎ কমে যাওয়া) ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অন্য সাধারণ লক্ষণ

অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব

মুখ শুকিয়ে যাওয়া

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

হাত-পায়ে অবশ বা ঝিঝি ধরা

গর্ভকালীন ডায়বেটিসের লক্ষণগুলো প্রায়শই গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক পরিবর্তনের সাথে মিলে যায়। এজন্য অনেক সময় মহিলারা বুঝতে পারেন না যে তারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত। তবে নিয়মিত প্রেগনেন্সি চেকআপ ও রক্ত পরীক্ষা করলে এ রোগ সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, গর্ভকালীন ডায়বেটিস সাময়িক হলেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যেসব মহিলার গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিস হয়েছিল, তাদের ভবিষ্যতে টাইপ–২ ডায়বেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই সচেতন থাকা, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এবং সঠিক ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে মা ও শিশুর উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কারণ

ডায়বেটিস কোনো একদিনে হঠাৎ করে হয় না। এটি ধীরে ধীরে শরীরে তৈরি হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু কারণ এই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এসব কারণের কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, আবার কিছু একেবারেই এড়ানো যায় না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো সম্পর্কে জানা এবং সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ যত আগে আমরা ঝুঁকি সম্পর্কে বুঝতে পারব, তত দ্রুত জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে ডায়বেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

বংশগত কারণ

ডায়বেটিসের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হলো পরিবারে এ রোগের ইতিহাস থাকা। যদি বাবা-মা বা নিকট আত্মীয়ের কারও ডায়বেটিস থাকে, তবে পরবর্তী প্রজন্মে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশেষত টাইপ–২ ডায়বেটিসে বংশগত প্রভাব অনেক বেশি।

অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন ডায়বেটিসের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে একটি। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। বিশেষ করে পেটের চারপাশে চর্বি জমা হলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এজন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

বর্তমান সময়ে অনেকেই কাজকর্মে ব্যস্ত থাকলেও শারীরিক পরিশ্রম করেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, ব্যায়াম না করা, হাঁটা-চলার অভাব—এসবের কারণে শরীরের ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ডায়বেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত মিষ্টি, ফাস্ট ফুড, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রসেসড খাবার খাওয়ার প্রবণতা ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এসব খাবার শুধু রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায় না, বরং স্থূলতা ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধির মাধ্যমেও ডায়বেটিসের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

বয়স

বয়স যত বাড়ে, ডায়বেটিসের ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ৪০ বছরের পর টাইপ–২ ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে তরুণদের মধ্যেও এ রোগের প্রবণতা বাড়ছে।

মানসিক চাপ

নিয়মিত মানসিক চাপ বা স্ট্রেসও ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে।

ঘুমের অভাব

অনিয়মিত জীবনযাপন ও পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও ডায়বেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে। ঘুমের অভাব ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।

গর্ভকালীন ডায়বেটিসের ইতিহাস

যেসব মহিলার গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়বেটিস হয়েছিল, তাদের ভবিষ্যতে টাইপ–২ ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া যেসব শিশুর জন্মের সময় ওজন বেশি (৪ কেজি বা তার বেশি), তাদের মায়ের ঝুঁকিও বেশি থাকে।

অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ কোলেস্টেরল

ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

হরমোনজনিত সমস্যা (যেমন: পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা PCOS)

ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কারণ অনেকগুলোই আমাদের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত। পরিবারে ডায়বেটিসের ইতিহাস থাকলেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ডায়বেটিস প্রতিরোধ করা কঠিন নয়, যদি আমরা আগে থেকেই সচেতন হই এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনি।

ডায়বেটিস শনাক্তকরণের উপায়

ডায়বেটিসকে প্রায়ই “নীরব ঘাতক” বলা হয়, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এটি অনেক সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। অনেকে বছরের পর বছর ধরে অজান্তেই ডায়বেটিসে ভুগে থাকেন, যতক্ষণ না এটি চোখ, কিডনি, স্নায়ু বা হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে জটিলতা তৈরি করে। তাই কেবলমাত্র লক্ষণ দেখে নয়, বরং সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমেই ডায়বেটিস নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব।

সাধারণ লক্ষণ পর্যবেক্ষণ

ডায়বেটিস শনাক্ত করার প্রথম ধাপ হলো রোগীর উপসর্গ পর্যবেক্ষণ। যেমন—বারবার তৃষ্ণা পাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, দ্রুত ওজন পরিবর্তন, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ইত্যাদি। তবে কেবল উপসর্গের ওপর নির্ভর করে ডায়বেটিস নির্ণয় করা যায় না, এর জন্য প্রয়োজন রক্ত পরীক্ষা।

রক্তে শর্করা পরীক্ষার উপায়

ডায়বেটিস নির্ণয়ের জন্য বেশ কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা ও ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নির্ধারণ করেন।

1. ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS) টেস্ট

কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

ফলাফল:

100 mg/dL এর নিচে → স্বাভাবিক

100–125 mg/dL → প্রিডায়বেটিস

126 mg/dL বা তার বেশি → ডায়বেটিস

2. ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT)

প্রথমে রোগীর ফাস্টিং রক্ত পরীক্ষা করা হয়, এরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্লুকোজ দ্রবণ পান করতে দেওয়া হয়।

২ ঘণ্টা পর আবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়।

ফলাফল:

140 mg/dL এর নিচে → স্বাভাবিক

140–199 mg/dL → প্রিডায়বেটিস

200 mg/dL বা তার বেশি → ডায়বেটিস

3. র‌্যান্ডম ব্লাড সুগার টেস্ট (RBS)

দিনের যেকোনো সময় রক্তে শর্করার মাত্রা মাপা হয়।

200 mg/dL বা তার বেশি হলে ডায়বেটিসের সম্ভাবনা থাকে, বিশেষত যদি অন্য উপসর্গও থাকে।

4. HbA1c (গ্লাইকোসিলেটেড হিমোগ্লোবিন) টেস্ট

গত ২–৩ মাসের গড় রক্তশর্করার মাত্রা জানার জন্য এ পরীক্ষা করা হয়।

ফলাফল:

5.7% এর নিচে → স্বাভাবিক

5.7%–6.4% → প্রিডায়বেটিস

6.5% বা তার বেশি → ডায়বেটিস

প্রস্রাব পরীক্ষা

রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি অনেক সময় প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়। প্রস্রাবে গ্লুকোজ বা কিটোন উপস্থিত থাকলে তা ডায়বেটিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তবে এটি একা কোনো নির্ণায়ক পরীক্ষা নয়।

গর্ভকালীন ডায়বেটিস শনাক্তকরণ

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ২৪–২৮ সপ্তাহের মধ্যে গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (OGTT) করে দেখা হয় তারা গর্ভকালীন ডায়বেটিসে আক্রান্ত কিনা।

ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য স্ক্রিনিং

যাদের পরিবারে ডায়বেটিসের ইতিহাস রয়েছে, যাদের অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল সমস্যা আছে—তাদের নিয়মিত স্ক্রিনিং করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ প্রিডায়বেটিস পর্যায়ে থাকাকালীনই যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তবে ডায়বেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

ডায়বেটিস শনাক্ত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো সঠিক রক্ত পরীক্ষা। শুধু লক্ষণের ওপর ভরসা করলে অনেক সময় রোগ ধরা পড়তে দেরি হয় এবং তখন জটিলতা তৈরি হয়। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষত যদি আপনি ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হন। সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এবং জটিলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

ডায়বেটিসের জটিলতা

ডায়বেটিস শুধু রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার নাম নয়; এটি দীর্ঘমেয়াদি নানা জটিলতার জন্ম দেয়। যদি সময়মতো শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে ডায়বেটিস শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই ধীরে ধীরে ক্ষতি করে। এজন্য একে “সাইলেন্ট কিলার” বলা হয়। এই জটিলতাগুলো আবার দুইভাবে ভাগ করা যায়—অল্পমেয়াদি (Acute) ও দীর্ঘমেয়াদি (Chronic) জটিলতা।

অল্পমেয়াদি জটিলতা

1. হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia)

যখন রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যায় (৭০ mg/dL এর নিচে), তখন এ অবস্থা হয়।

লক্ষণ: ঘাম, মাথা ঘোরা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, কাঁপুনি, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

ইনসুলিন বা ওষুধ সঠিক মাত্রায় না নেওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম বা না খেয়ে থাকার কারণে হতে পারে।

2. হাইপারগ্লাইসেমিয়া (Hyperglycemia)

রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এ সমস্যা হয়।

লক্ষণ: অতিরিক্ত তৃষ্ণা, প্রস্রাব, মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখা।

3. ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA)

বিশেষত টাইপ–১ ডায়বেটিসে হয়। ইনসুলিনের অভাবে শরীর চর্বি ভাঙতে শুরু করলে কিটোন নামক বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়।

লক্ষণ: বমি, পেট ব্যথা, শ্বাসে ফলের মতো গন্ধ, অচেতন হয়ে যাওয়া। এটি জরুরি চিকিৎসা ছাড়া প্রাণঘাতী হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা

1. হৃদরোগ ও স্ট্রোক

ডায়বেটিস রোগীদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশি।

রক্তনালীর ক্ষতির কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

2. কিডনির ক্ষতি (Diabetic Nephropathy)

ডায়বেটিস কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালী ধ্বংস করে।

ফলে ধীরে ধীরে কিডনি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।

3. চোখের ক্ষতি (Diabetic Retinopathy)

দীর্ঘমেয়াদি ডায়বেটিস চোখের রেটিনার রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এর ফলে ঝাপসা দেখা, গ্লুকোমা, ক্যাটার্যাক্ট, এমনকি অন্ধত্ব হতে পারে।

4. স্নায়ুর ক্ষতি (Diabetic Neuropathy)

রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে।

লক্ষণ: হাত-পায়ে অবশ লাগা, ঝিঝি ধরা, ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া।

এর ফলে হাঁটাচলায় সমস্যা এবং পায়ে ঘা তৈরি হতে পারে।

5. পায়ের জটিলতা

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ও স্নায়ুর ক্ষতির কারণে পায়ে আলসার, সংক্রমণ তৈরি হয়।

অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ গুরুতর হলে অঙ্গ কেটে ফেলতেও হতে পারে।

6. ত্বকের সমস্যা

ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, চুলকানি, কালো দাগ ইত্যাদি বেশি দেখা যায়।

7. দাঁত ও মাড়ির সমস্যা

ডায়বেটিস রোগীদের মধ্যে মাড়ি ফুলে যাওয়া, রক্ত পড়া এবং দাঁতের সংক্রমণ বেশি হয়।

মানসিক ও সামাজিক প্রভাব

ডায়বেটিস শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক জীবনেও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা, নিয়মিত ওষুধ বা ইনসুলিন ব্যবহার, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ—এসব কারণে রোগীরা অনেক সময় হতাশা ও মানসিক চাপে ভোগেন।

ডায়বেটিসের জটিলতাগুলো ভয়াবহ হলেও সচেতনতা ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে এগুলো অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ওষুধ সেবন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা—এসব মেনে চললে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

ডায়বেটিস প্রতিরোধে করণীয়

ডায়বেটিস এমন এক রোগ যা একবার ধরা পড়লে আজীবন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তবে সুখবর হলো—বিশেষ করে টাইপ–২ ডায়বেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধযোগ্য। সচেতন জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা ডায়বেটিস থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি। তাই প্রতিরোধের উপায় জানা এবং তা দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাসে পরিণত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা

অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, কোমল পানীয় ও ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম ও আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে।

সাদা চাল বা পরিশোধিত আটা কম খেয়ে ব্রাউন রাইস, লাল আটা, ওটস, মিলেটস ইত্যাদি গ্রহণ করা ভালো।

ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার কমাতে হবে।

খাবারের পরিমাণে সংযম রাখা এবং নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং করা উচিত।

অফিস বা পড়াশোনার কারণে দীর্ঘসময় বসে থাকলে প্রতি ঘণ্টায় ৫–১০ মিনিট হাঁটা-চলা করা প্রয়োজন।

নিয়মিত ব্যায়াম শুধু ডায়বেটিস প্রতিরোধই করে না, বরং রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ডায়বেটিসের প্রধান ঝুঁকি।

শরীরের বিশেষ করে পেটের চারপাশের চর্বি কমানো জরুরি।

প্রতি সপ্তাহে অন্তত আধা কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্য নেওয়া কার্যকর হতে পারে।

৪. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার

ধূমপান রক্তনালীর ক্ষতি করে, যার ফলে ডায়বেটিসের জটিলতা আরও বেড়ে যায়।

অ্যালকোহল রক্তে শর্করার ওঠানামা বাড়ায় এবং লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।

৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।

নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, বই পড়া বা গান শোনার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম নেওয়া জরুরি।

ঘুমের অভাব ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়, যা ডায়বেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে।

৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

যাদের পরিবারে ডায়বেটিসের ইতিহাস আছে বা ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন করেন, তাদের বছরে অন্তত একবার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত।

প্রিডায়বেটিস ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

৮. সচেতনতা ও ইতিবাচক মানসিকতা

ডায়বেটিসকে ভয় না পেয়ে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপায় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

পরিবার ও সমাজে সবাইকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন উৎসাহিত করা জরুরি।

ডায়বেটিস প্রতিরোধ সম্ভব, যদি আমরা সচেতন হই এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলি। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ কমানো এবং ধূমপান-মদ্যপান থেকে দূরে থাকা—এসব ছোট ছোট পরিবর্তনই আমাদের দীর্ঘদিন সুস্থ রাখবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধই হলো ডায়বেটিস মোকাবিলার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়

ডায়বেটিস একবার ধরা পড়লে এটি সারানো যায় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা নয়, বরং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখা। নিয়মিত যত্ন, সচেতন খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ওষুধ এবং মানসিক স্থিতি—সব মিলিয়ে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে কার্যকর কিছু করণীয় আলোচনা করা হলো।

১. নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে ঘরে বসেই ব্লাড সুগার মাপা যায়।

HbA1c পরীক্ষা বছরে অন্তত ২ বার করলে গত কয়েক মাসের গড় শর্করার অবস্থা জানা যায়।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

খাবারে পরিমাণ ও গুণগত মান দুটিই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সাদা চাল, আলু, চিনি, সফট ড্রিঙ্কসের মতো উচ্চ কার্বোহাইড্রেট খাবার সীমিত করতে হবে।

বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি, কম মিষ্টি ফল খেতে হবে।

ছোট ছোট ভাগে দিনে ৫–৬ বার খাওয়ার অভ্যাস ভালো।

খাবার বাদ দেওয়া বা একসাথে অনেক বেশি খাওয়া বিপজ্জনক।

৩. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

প্রতিদিন অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।

যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ও হালকা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজও উপকারী।

যাদের বসে কাজ করার অভ্যাস বেশি, তারা প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৫ মিনিট হাঁটাচলা করবেন।

৪. ওষুধ ও ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা যাবে না।

ইনসুলিন ব্যবহারকারীরা নিয়মিত ইনজেকশনের স্থান পরিবর্তন করবেন, যাতে চামড়ার নিচে ফোলা না হয়।

সময়মতো ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ না করলে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়।

ওজন সঠিক মাত্রায় রাখলে ওষুধ বা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়।

নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

৬. মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা

ডায়বেটিস রোগীরা অনেক সময় হতাশা বা মানসিক চাপ অনুভব করেন, যা শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে।

মেডিটেশন, বই পড়া, সঙ্গীত শোনা বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করা উচিত নয়।

৭. পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নেওয়া জরুরি।

ঘুম কম হলে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, ফলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।

৮. জটিলতা প্রতিরোধে সতর্কতা

পায়ের যত্ন নিতে হবে, কারণ সামান্য ক্ষতও বড় সংক্রমণে রূপ নিতে পারে।

চোখ, কিডনি ও দাঁতের নিয়মিত চেকআপ করা জরুরি।

রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা দরকার।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা মূলত একটি জীবনধারার ব্যাপার। এটি কোনো একদিনের কাজ নয়, বরং প্রতিদিনের যত্নে গড়ে ওঠা একটি দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, নিয়মিত পরীক্ষা, চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখলেই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে—নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

ডায়বেটিস রোগীর জন্য খাদ্যতালিকা

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। খাবার শুধু শরীরের শক্তি জোগায় না, বরং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সরাসরি ভূমিকা রাখে। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য খাদ্যতালিকা নির্ধারণ করার সময় খেয়াল রাখতে হয় যাতে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়, তবে একইসঙ্গে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে না ফেলে। তাই প্রতিদিনের খাবার হতে হবে সুষম, আঁশসমৃদ্ধ, কম চর্বি ও নিয়ন্ত্রিত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত।

সকালের নাশতা (Breakfast)

১ কাপ লেবুর পানি বা গরম পানিতে ভিজানো মেথি/চিয়া সিডস।

১–২ টুকরো ব্রাউন ব্রেড/ওটস/লাল আটা রুটি।

১টা সেদ্ধ ডিম বা অল্প তেলে ভাজা ডিমের ঝুরি।

১ কাপ চিনি ছাড়া গ্রিন টি/ব্ল্যাক কফি।

বিকল্প হিসেবে অল্প পরিমাণ ফল (যেমন পেয়ারা, আপেল, কমলা)।

দুপুরের খাবার (Lunch)

১ কাপ ব্রাউন রাইস বা অল্প পরিমাণ লাল চাল।

১–২ টুকরো মাছ/চিকেন (তেল কম ব্যবহার করা ভালো)।

প্রচুর শাকসবজি (লাউ, ঝিঙা, পালং শাক, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি)।

১ বাটি ডাল (তেলে ফোড়ন কম দিতে হবে)।

সালাদ (শসা, টমেটো, গাজর, লেটুস)।

দই (চিনি ছাড়া, অল্প পরিমাণ)।

বিকেলের নাশতা (Evening Snacks)

১ কাপ গ্রিন টি/চিনি ছাড়া লেবু চা।

ভাজা ছোলা/বাদাম/মুগডাল (এক মুঠোর বেশি নয়)।

বিকল্প হিসেবে অল্প পরিমাণ সিদ্ধ ভুট্টা বা সেদ্ধ ডিম।

রাতের খাবার (Dinner)

১–২টা লাল আটা রুটি বা অল্প পরিমাণ ভাত।

হালকা তরকারি (ভাজি বা কম তেলে রান্না করা সবজি)।

চিকেন/মাছ/ডিম যেকোনো একটি।

সালাদ অবশ্যই রাখতে হবে।

সম্ভব হলে ভাতের পরিবর্তে রুটি/ওটস খাওয়া ভালো।

ঘুমানোর আগে

১ গ্লাস গরম দুধ (চিনি ছাড়া, স্কিমড মিল্ক হলে ভালো)।

যারা রাতে ইনসুলিন নেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা স্ন্যাক্স (যেমন ২টা বিস্কুট বা ছোট ফলের টুকরো) খেতে পারেন।

কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন

মিষ্টি জাতীয় খাবার (রসগোল্লা, জেলি, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি)।

কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিঙ্কস, প্যাকেটজাত জুস।

অতিরিক্ত ভাত, আলু, মিষ্টি কুমড়া, কলা, আঙ্গুর।

ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেলে রান্না করা খাবার।

ধূমপান ও অ্যালকোহল।

বাড়তি টিপস

একসাথে বেশি খাওয়ার পরিবর্তে দিনে ৫–৬ বার অল্প অল্প করে খাবেন।

খাবারে আঁশের পরিমাণ বাড়ান, কারণ আঁশ হজম ধীর করে এবং রক্তে শর্করা বাড়তে দেয় না।

পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়েট চার্ট বানানো সবচেয়ে ভালো উপায়।

ডায়বেটিস রোগীর খাদ্যতালিকা শুধু সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে না, বরং শরীরকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা থেকেও রক্ষা করে। তাই প্রতিদিনের খাবারকে বেছে নিতে হবে সচেতনভাবে। মনে রাখতে হবে—“ওষুধ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে আনে, কিন্তু সঠিক খাবারই সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে।”

ডায়বেটিস রোগীর জন্য ব্যায়াম

ডায়বেটিস রোগীর জন্য ব্যায়াম শুধু শরীরকে ফিট রাখার মাধ্যম নয়, বরং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমায়। তাই ডায়বেটিস রোগীদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।

কেন ব্যায়াম জরুরি?

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: শারীরিক পরিশ্রমের সময় পেশি অতিরিক্ত গ্লুকোজ ব্যবহার করে, ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ডায়বেটিসের বড় ঝুঁকি, আর ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে।

হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ: ডায়বেটিস রোগীদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেশি, নিয়মিত ব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।

স্ট্রেস কমানো: ব্যায়াম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়, যা রক্তে শর্করার ওঠানামা প্রতিরোধে সহায়ক।

কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন?

1. হাঁটা

প্রতিদিন অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর ব্যায়াম।

সকালে বা সন্ধ্যায় হাঁটা রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে।

2. যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন

ডায়বেটিস রোগীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

বিশেষ কিছু আসন যেমন ভুজঙ্গাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, শবাসন ইত্যাদি সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

3. এরোবিক ব্যায়াম

সাইক্লিং, সাঁতার, দৌড়ানো বা জগিং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট এরোবিক এক্সারসাইজ করা ভালো।

4. স্ট্রেংথ ট্রেনিং

ডাম্বেল, রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড বা বডিওয়েট এক্সারসাইজ করলে পেশি শক্ত হয় এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে।

সপ্তাহে অন্তত ২ দিন স্ট্রেংথ ট্রেনিং করা যেতে পারে।

5. স্ট্রেচিং ব্যায়াম

প্রতিদিন ১০–১৫ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করলে শরীর নমনীয় হয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

ব্যায়াম করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

ব্যায়ামের আগে ও পরে ব্লাড সুগার মাপা দরকার, বিশেষ করে ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের জন্য।

হঠাৎ বেশি ব্যায়াম না করে ধীরে ধীরে সময় ও মাত্রা বাড়াতে হবে।

আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করতে হবে, কারণ ডায়বেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন বিশেষভাবে জরুরি।

খালি পেটে ব্যায়াম না করে হালকা নাশতা খেয়ে ব্যায়াম করা ভালো।

ব্যায়ামের সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে।

কারা সতর্ক থাকবেন?

যাদের চোখ, কিডনি বা হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত জটিলতা আছে, তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করা উচিত।

বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হলে ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে।

ডায়বেটিস রোগীর জন্য ব্যায়াম শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং প্রতিদিনের ওষুধের মতোই জরুরি। নিয়মিত হাঁটা, যোগব্যায়াম, এরোবিক এক্সারসাইজ ও স্ট্রেংথ ট্রেনিং একসাথে করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে জটিলতার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখতে হবে—“ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পাশাপাশি ব্যায়ামই হলো প্রকৃত শক্তিশালী অস্ত্র।”

ডায়বেটিস রোগীর জন্য লাইফস্টাইল টিপস

ডায়বেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা পুরো জীবনকে প্রভাবিত করে। ওষুধ বা ইনসুলিনের পাশাপাশি জীবনযাত্রার ছোট ছোট পরিবর্তন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে। অনেক সময় রোগীরা মনে করেন শুধু খাবার ও ওষুধেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।

১. নিয়মিত রুটিন মেনে চলা

নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগা শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে।

প্রতিদিন একই সময়ে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি।

কাজ, বিশ্রাম ও বিনোদনের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখতে হবে।

২. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত স্ট্রেস ডায়বেটিসকে খারাপ করে।

মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো, বই পড়া বা গান শোনাও কার্যকর।

৩. ঘুমের প্রতি যত্নশীল হওয়া

প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

দেরি করে ঘুমানো এবং বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া শরীরের ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমায়।

শোবার আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি ব্যবহার কমানো ভালো।

৪. ব্যায়ামকে অভ্যাসে পরিণত করা

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপ থাকা জরুরি।

লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার, ছোট দূরত্বে গাড়ির বদলে হাঁটা, অফিসে বা বাসায় অল্প সময় পরপর নড়াচড়া করার অভ্যাস করতে হবে।

৫. খাবার নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা

খাবার শুধু কম খাওয়াই নয়, বরং সঠিকভাবে বেছে নেওয়া জরুরি।

জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

বেশি আঁশযুক্ত শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম খাবারে রাখতে হবে।

একসাথে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ার অভ্যাস ভালো।

৬. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

রক্তে শর্করা, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।

বছরে অন্তত একবার চোখ, কিডনি ও দাঁতের চেকআপ করাতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।

৭. ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা

ধূমপান রক্তনালী সংকুচিত করে এবং ডায়বেটিস রোগীর হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

অ্যালকোহল রক্তে শর্করার ওঠানামা ঘটায়, তাই এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।

৮. সামাজিক ও পারিবারিক সমর্থন

পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি ও সমর্থন ডায়বেটিস রোগীর মানসিক শক্তি বাড়ায়।

সামাজিকভাবে খোলাখুলি আলোচনা করলে সচেতনতা বাড়ে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ, খাবার বা ব্যায়াম যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি জীবনযাপনের ছোট ছোট অভ্যাসও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রুটিন, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক শান্তি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম—সব মিলিয়েই একজন ডায়বেটিস রোগী সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ডায়বেটিস শুধু একটি রোগ নয়, বরং এটি একটি জীবনধারার চ্যালেঞ্জ, আর সঠিক লাইফস্টাইলই এর সমাধান।

ডায়বেটিসে যেসব ভুলগুলো  এড়ানো উচিত

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা। অনেক রোগী জানেন না কোন ছোট ছোট ভুল তাদের সুগার লেভেল হঠাৎ বেড়ে দিতে পারে বা জটিলতা বাড়াতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি নিজের অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। নিচে ডায়বেটিস রোগীদের করা সাধারণ ভুলগুলো ও সেগুলো এড়িয়ে চলার উপায় তুলে ধরা হলো।

১. খাবারের ব্যাপারে অসচেতনতা

অনেক রোগী মনে করেন মিষ্টি জাতীয় খাবার না খেলেই যথেষ্ট, কিন্তু বাস্তবে অতিরিক্ত ভাত, আলু, পাঁউরুটি কিংবা মিষ্টি ফলও সুগার বাড়ায়।

আবার কেউ কেউ না ভেবেই বাজারের জুস, কোমল পানীয় বা ফাস্টফুড খেয়ে ফেলেন।

👉 সমাধান: খাদ্যতালিকা নিয়ে সচেতন হোন, ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

২. ওষুধ বা ইনসুলিন অনিয়মিতভাবে খাওয়া

অনেকে ভালো লাগলে ওষুধ বন্ধ করে দেন, আবার কেউ ডোজ মিস করেন। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে বা কমে যেতে পারে।

👉 সমাধান: ওষুধ নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণ করতে হবে, চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে না।

৩. নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা না করা

অনেক রোগী কেবল অসুস্থ বোধ করলেই সুগার মাপেন। এতে সময়মতো নিয়ন্ত্রণহীনতা ধরা পড়ে না।

👉 সমাধান: সপ্তাহে অন্তত কয়েকবার ব্লাড সুগার মাপুন, এবং রিপোর্ট সংরক্ষণ করুন।

৪. ব্যায়াম না করা

ব্যস্ততার কারণে বা আলসেমির জন্য অনেকেই ব্যায়াম করেন না। ফলে শরীরের ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

👉 সমাধান: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫. ঘুমের প্রতি উদাসীনতা

দেরি করে ঘুমানো বা কম ঘুমানো রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়।

👉 সমাধান: নিয়মিত রাতে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।

৬. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ না করা

মানসিক চাপ ডায়বেটিসের বড় শত্রু। অফিস, পরিবার বা আর্থিক কারণে স্ট্রেস বাড়লে সুগারও বেড়ে যায়।

👉 সমাধান: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা প্রিয় কাজে সময় দিন।

৭. শরীরের অন্যান্য সমস্যা অবহেলা করা

দাঁতের সমস্যা, চোখের ঝাপসা দেখা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া—এসব উপসর্গ উপেক্ষা করলে জটিলতা বাড়তে পারে।

👉 সমাধান: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

৮. ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ

ধূমপান ও মদ্যপান ডায়বেটিসের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে, হৃদরোগ ও কিডনির ক্ষতি বাড়ায়।

👉 সমাধান: এগুলো সম্পূর্ণ বাদ দিন।

৯. নিজের মতো করে চিকিৎসা করা

অনেক রোগী বন্ধুর পরামর্শে বা ইন্টারনেট দেখে ওষুধ পরিবর্তন করেন।

👉 সমাধান: ডায়বেটিস চিকিৎসা সবসময় যোগ্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ভুল করলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। তাই খাবার, ওষুধ, ব্যায়াম, ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিটি বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ডায়বেটিস ম্যানেজমেন্ট কোনো একদিনের কাজ নয়, বরং এটি আজীবনের অভ্যাস। ছোট ছোট ভুল এড়িয়ে চললেই সুস্থ, স্বাভাবিক ও দীর্ঘ জীবনযাপন করা সম্ভব।

ডায়বেটিস রোগীর জন্য জরুরি মেডিকেল টেস্ট

ডায়বেটিস এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা শুধু রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না; বরং শরীরের প্রায় সব অঙ্গেই প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত কিছু মেডিকেল টেস্ট করা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো শুধু রোগের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে না, বরং ভবিষ্যৎ জটিলতা এড়াতেও সহায়ক। অনেক সময় ডায়বেটিস রোগী কোনো উপসর্গ টের পান না, কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে ভেতরে লুকিয়ে থাকা সমস্যাগুলো ধরা পড়ে যায়।

১. রক্তে শর্করার পরীক্ষা

ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS): খালি পেটে রক্তে শর্করার পরিমাণ নির্ণয় করে।

২ ঘণ্টা পর ব্লাড সুগার (2hABF): খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা বোঝায়।

র‍্যান্ডম ব্লাড সুগার (RBS): দিনের যেকোনো সময়ে রক্ত পরীক্ষা করা যায়।

👉 এগুলো নিয়মিত করলে বোঝা যায় ডায়বেটিস কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে।

২. HbA1c টেস্ট

গত ২–৩ মাসের গড় রক্তে শর্করার মান জানায়।

বছরে অন্তত ২–৩ বার এই পরীক্ষা করা উচিত।

সাধারণত ৬.৫% বা তার বেশি হলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি বেশি বলে ধরা হয়।

৩. কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা

সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া: কিডনি কতটা সঠিকভাবে কাজ করছে তা বোঝায়।

ইউরিন মাইক্রোঅ্যালবুমিন: প্রস্রাবে অ্যালবুমিন থাকলে কিডনির প্রাথমিক ক্ষতি ধরা পড়ে।

👉 ডায়বেটিস রোগীদের কিডনি ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তাই বছরে অন্তত একবার এই টেস্ট করা জরুরি।

৪. লিপিড প্রোফাইল টেস্ট

কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও HDL/LDL এর মাত্রা বোঝায়।

ডায়বেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, তাই এই টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT)

ডায়বেটিসে লিভারের ওপর চাপ পড়ে, বিশেষ করে যারা ওষুধ খান তাদের ক্ষেত্রে।

বছরে একবার লিভারের কার্যকারিতা দেখা প্রয়োজন।

৬. চোখের পরীক্ষা

ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথি ডায়বেটিস রোগীদের অন্যতম গুরুতর জটিলতা।

বছরে অন্তত একবার চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করা উচিত।

৭. দাঁত ও মুখের পরীক্ষা

ডায়বেটিস রোগীদের দাঁতের মাড়ির সমস্যা ও ইনফেকশন বেশি হয়।

প্রতি ৬ মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তার দেখানো ভালো।

৮. পায়ের পরীক্ষা

ডায়বেটিসে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে পায়ে অসাড়তা বা ক্ষত হতে পারে, যা শুকাতে দেরি হয়।

তাই নিয়মিত পা পরীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

৯. রক্তচাপ পরীক্ষা

উচ্চ রক্তচাপ ডায়বেটিস রোগীদের জটিলতা দ্বিগুণ করে।

প্রতিবার ডাক্তার দেখানোর সময় বা ঘরে মেশিন থাকলে নিয়মিত রক্তচাপ মাপা উচিত।

ডায়বেটিস রোগীর জন্য নিয়মিত মেডিকেল টেস্ট শুধু সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য। তাই খাবার ও ওষুধের পাশাপাশি এসব পরীক্ষা সময়মতো করা উচিত। মনে রাখতে হবে—আজ পরীক্ষা করলে কাল জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

Read More:

ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top