কিসমিসের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সঠিকভাবে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কিসমিসের উপকারিতা শুনলে চমকে যাবেন! পুষ্টি গুনে ভরপুর বলে কিসমিসকে শুকনো ফলের রাজা বলা হয়ে থাকে। শুকনো আঙ্গুরকে কিসমিস বলা হয়। কিসমিসের প্রায় ৭২% শর্করা যার অধিকাংশ গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ যা শরীরকে জীবনীশক্তি প্রদান করে।
কিসমিসের ইংরেজি নাম Raisin (রেজিন)।
Scientific name: Vitis vinifera
কয়েক ধরনের কিসমিস পাওয়া যায় যেমন বাদামী কিসমিস, সুলতানা (গোল্ডেন রেজিন), বেদানা বা কালো কিসমিস। এই আর্টিকেলে কিসমিসের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কিসমিসের উপকারিতাঃ
কিসমিসের উপকারিতা জানলে বিস্ময় প্রকাশ না করে থাকতে পারবেন না! এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। জ্বর, পাইলস, হাইপারটেনশন, হজমের, পরিপাকতন্ত্রের, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌন দূর্বলতা, ক্যান্সার ইত্যাদি অনেক ঝুঁকি পূর্ণ রোগ থেকে রক্ষা করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুনের উপাদানের তথ্য
নাম | পরিমান |
সোডিয়াম | ২৮ mg |
বোরন | ০.৯৫ mg |
ক্যালসিয়াম | ২৮ mg |
নিয়াসিন | ১.১১ mg |
ক্যালরি | ২৯৯ kcal |
আয়রন | ২.৫৯ mg |
জিংক | ০.১৮ mg |
ম্যাগনেশিয়াম | ৩০ mg |
রিবোফ্লাভিন | ০.১৮ mg |
প্রোটিন | ২.৫২ gm |
চর্বি | ০.৫৪ gm |
পানি | ১৬.৫৭ gm |
ভিটামিন বি৬ | ০.১৮ mg |
থায়ামিন | ০.১১৪ mg |
ভিটামিন সি | ৫.৪ mg |
ফসফরাস | ৭৫ mg |
ফাইবার | ৬.৮ gm |
ফোলেট | ৩ mg |
পটাশিয়াম | ৮২৫ mg |
কার্বোহাইড্রেড | ৭৮.৪৭ |
কিসমিস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্যে করেঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে 825 mg পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্যে করে। পটাশিয়াম মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই যারা হাইপারটেনশনে ভুগছেন বা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন তারা পরিমানমত নিয়ম অনুযায়ী কিসমিস খেলে উপকার পাবেন।
অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা কমায়ঃ
আয়রনের অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। আর হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দেখা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে 2.59 mg আয়রন থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দূর করতে কিসমিস খেতে পারেন। তাছাড়াও কিসমিসের একটি উপাদান “তামা” যা রক্তে লাল রক্তকণিকা গঠন করে অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা কমাতে সাহায্যে করে।
কিসমিস হজম শক্তি উন্নত করেঃ
কিসমিসের উপকারিতা এটি হজমে সাহায্য করে। কিসমিস ফাইবার যুক্ত। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, পেট পরিস্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূুর করে। ফলে হজম শক্তি উন্নত হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
ফ্রী রেডিক্যাল আমাদের শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি করে প্রানঘাতী রোগের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু কিসমিসের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেই ফ্রী রেডিক্যাল হ্রাস করে বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। কিসমিসের মধ্যে ভিটামিন,খনিজ পদার্থে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
শরীরের বিষক্রিয়া দূর করেঃ
রাতে কয়েকটি কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকাল বেলা খালি পেটে খেলে সেই ভেজানো কিসমিসের পানি শরীর থেকে সমস্ত বিষক্রিয়া দূর করে।
কিসমিস কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান করেঃ
ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার নিয়মিত না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা খুব শক্ত হয়। পরে পাইলস, এনাল ফিসারের মত কঠিন রোগ হয়। কিসমিসের মধ্যে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেট পরিস্কার করে পরিপাকতন্ত্রকে যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা করে।
আরো পড়তে পারেন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অশ্বগন্ধার ব্যবহারের উপকারিতা
ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ
আপনার কি ওজন অনেক কম ? বয়স অনুযায়ী আপনার চেহারার কি বেহাল দশা ? স্বাস্থ্য কি শুকিয়ে গেছে ? দিনে দিনে চিকন হয়ে যাচ্ছেন ? তাহলে আপনাকে কিসমিস খেতে হবে। কিসমিস একটি ড্রাই ফ্রুট যা আপনার ওজন বাড়াবে। কিসমিসে আছে ২৯৯ ক্যালরি যা আপনার ওজন বৃদ্ধি করে শুকিয়ে যাওয়া শরীরকে মোটা ও আকর্ষণীয় করবে।
হাড় গঠনে কিসমিসের উপকারিতাঃ
হাড় গঠনের প্রধান উপাদানের মধ্যে একটা হলো ক্যালসিয়াম। ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে আছে 28 mg ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়তা করে।
অনিদ্রা দূর করে মানষিক প্রশান্তি দেয়ঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে আছে 0.95 mg বোরন। বোরন অনিদ্রা দূর করে ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি তে রাখে।
ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ
ফ্রী রেডিক্যাল আমাদের শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি করে। ক্যান্সারের জীবাণুগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার ও টিউমার ক্যান্সারের জন্য এই ফ্রী রেডিক্যাল দায়ী। কিন্তু কিসমিসের মধ্যে আছে ক্যাটেচিং নামক একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হ্রাস করে। ক্যাটেচিং নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রী রেডিক্যালদের সাথে যুদ্ধ করে ফ্রী রেডিক্যালদের ধ্বংস করে শরীরকে ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
যৌন শক্তি বৃদ্ধি করেঃ
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে যৌন দূর্বলতা দেখা দেয়। কিসমিসের মধ্যে থাকা বোরন টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে কিসমিস খাওয়ার ফলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি হয়।
কিসমিস খাওয়ার নিয়মঃ
কিসমিসের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম জানা জরুরী। কিসমিসের উপকারিতা পেতে হলে নিয়মমত কিসমিস খেতে হবে। ৮ থেকে ১০ টা কিসমিস ভালভাবে ধুয়ে এক গ্লাস পানিতে সারা রাত (কমপক্ষে ৬ ঘন্টা) ভিজিয়ে রাখতে হবে। । সকালে কিসমিসের ভেজানো পানি হালকা গরম করে খালি পেটে পান করতে হবে। তারপর কিসমিসগুলো ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। এরপর ৩০ মিনিট অন্য কোন খাবার খাওয়া যাবে না।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
কিসমিসের ইংরেজি নাম কি ?
কিসমিসের ইংরেজি নাম Raisin (রেজিন)।
কিসমিসের বৈজ্ঞানিক নাম কি ?
কিসমিসের বৈজ্ঞানিক নাম
Vitis vinifera
কয় ধরনের কিসমিস পাওয়া যায় ? কি কি ?
৩ ধরনের কিসমিস পাওয়া যায় যেমন বাদামী কিসমিস, সুলতানা (গোল্ডেন রেজিন), বেদানা বা কালো কিসমিস।
কিসমিসের উপকারিতা কি ?
কিসমিসের উপকারিতা অনেক। এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। জ্বর, পাইলস, হাইপারটেনশন, হজমের, পরিপাকতন্ত্রের, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌন দূর্বলতা, ক্যান্সার ইত্যাদি অনেক ঝুঁকি পূর্ণ রোগ থেকে রক্ষা করে। কিসমিসের প্রায় ৭২% শর্করা যার অধিকাংশ গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ যা শরীরকে জীবনীশক্তি প্রদান করে।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম কি ?
৮ থেকে ১০ টা কিসমিস ভালভাবে ধুয়ে এক গ্লাস পানিতে সারা রাত (কমপক্ষে ৬ ঘন্টা) ভিজিয়ে রাখতে হবে। । সকালে কিসমিসের ভেজানো পানি হালকা গরম করে খালি পেটে পান করতে হবে। তারপর কিসমিসগুলো ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে। এরপর ৩০ মিনিট অন্য কোন খাবার খাওয়া যাবে না।
কিসমিস খেলে কি ওজন বাড়ে ?
কিসমিস একটি ড্রাই ফ্রুট যা আপনার ওজন বাড়াবে। কিসমিসে আছে ২৯৯ ক্যালরি যা আপনার ওজন বৃদ্ধি করে শুকিয়ে যাওয়া শরীরকে মোটা ও আকর্যনীয় করবে।
কিসমিস কি উচ্চ রক্ত চাপ কমায় ?
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে 825 mg পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে সাহায্যে করে। পটাশিয়াম মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই যারা হাইপারটেনশনে ভুগছেন বা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন তারা পরিমানমত নিয়ম অনুযায়ী কিসমিস খেলে উপকার পাবেন।
কিসমিস খেলে কি রুচি বাড়ে ?
কিসমিস খাওয়ার রুচি বাড়ায়। হজমে সাহায্য করে। কিসমিস ফাইবার যুক্ত। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, পেট পরিস্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূুর করে। ফলে হজম শক্তি উন্নত হয়।
রক্ত শুন্যতায় কি কিসমিস খাওয়া যাবে ?
আয়রনের অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। আর হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দেখা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে 2.59 mg আয়রন থাকায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দূর করতে কিসমিস খেতে পারেন। তাছাড়াও কিসমিসের একটি উপাদান “তামা” যা রক্তে লাল রক্তকণিকা গঠন করে অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা কমাতে সাহায্যে করে।
কিসমিস কেন খেতে হবে ?
ফ্রী রেডিক্যাল আমাদের শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি করে প্রানঘাতী রোগের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু কিসমিসের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেই ফ্রী রেডিক্যাল হ্রাস করে বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। কিসমিসের মধ্যে ভিটামিন,খনিজ পদার্থে ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
কিসমিস খেলে কি কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয় ?
ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার নিয়মিত না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। আর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পায়খানা খুব শক্ত হয়। পরে পাইলস, এনাল ফিসারের মত কঠিন রোগ হয়। কিসমিসের মধ্যে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পেট পরিস্কার করে পরিপাকতন্ত্রকে যাবতীয় রোগ থেকে রক্ষা করে।
কিসমিস খেলে কি ভালো ঘুম হয় ?
প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে আছে 0.95 mg বোরন। বোরন অনিদ্রা দূর করে ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে এবং মানসিকভাবে প্রশান্তি তে রাখে।
কিসমিস কি ক্যান্সার করে ?
ফ্রী রেডিক্যাল আমাদের শরীরের কোষগুলোর ক্ষতি করে। ক্যান্সারের জীবাণুগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার ও টিউমার ক্যান্সারের জন্য এই ফ্রী রেডিক্যাল দায়ী। কিন্তু কিসমিসের মধ্যে আছে ক্যাটেচিং নামক একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হ্রাস করে। ক্যাটেচিং নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রী রেডিক্যালদের সাথে যুদ্ধ করে ফ্রী রেডিক্যালদের ধ্বংস করে শরীরকে ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
কিসমিস কি যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে ?
টেস্টোস্টেরন কমে গেলে যৌন দূর্বলতা দেখা দেয়। কিসমিসের মধ্যে থাকা বোরন টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে কিসমিস খাওয়ার ফলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি হয়।
প্রতিদিন কয়টি কিসমিস খেতে হবে ?
নিয়মিত ৮ থেকে ১০ টি কিসমিস খেতে হবে।
কিসমিস কখন খেতে হবে ?
কিসমিস রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে কিসমিসের ভেজানো পানি হালকা গরম করে খালি পেটে পান করতে হবে। তারপর কিসমিসগুলো ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হবে।
কিসমিসের মধ্যে কি ক্যালসিয়াম আছে ?
হাড় গঠনের প্রধান উপাদানের মধ্যে একটা হলো ক্যালসিয়াম। ১০০ গ্রাম কিসমিসের মধ্যে আছে 28 mg ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়তা করে।